প্রকাশিত: Thu, Jan 19, 2023 3:54 PM
আপডেট: Sat, May 10, 2025 12:23 PM

খাদ্য, যৌনতা এবং রুচিবোধ

বাতেন মোহাম্মদ

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুইটা পণ্য হচ্ছে খাদ্য ও যৌনতা। আরো সহজভাবে বললে, মানুষের আদিমতম দুইটা প্রবৃত্তি হচ্ছে দেহের ক্ষুধা ও জৈবিক ক্ষুধা। একটা জীবকে বাঁচিয়ে রাখে, আরেকটা বংশবিস্তার করে বংশধারা টিকিয়ে রাখে। কিন্তু মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী হিসাবে এই দুটোর মধ্যে টেস্ট যোগ করলো, শিল্পিত রূপ দেওয়ার চেষ্টা করলো।

বুর্দোর বিখ্যাত প্রবন্ধ উরংঃরহপঃরড়হ : অ ংড়পরধষ পৎরঃরয়ঁব ড়ভ লঁফমবসবহঃ ড়ভ ঃধংঃব-তে দেখিয়েছেন টেস্ট কিংবা রুচি আসলে পুরোপুরি বায়োলজিকাল না, এটা কন্সট্রাকটেড। সোসাইটি এটা কন্সট্রাকট করে। এইক্ষেত্রে শিক্ষা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তার গুরুত্বপূর্ণ থিসিসÑ শিক্ষাই মানুষের রুচি। তাই খাদ্য ও যৌনতাকে আপনি কীভাবে প্রকাশ ও ব্যবহার করছেন এটার মাধ্যমে আপনার রুচিবোধ প্রকাশ পাবে, তথা আপনার শিক্ষা।

আমেরিকায় হুটার্স নামে একটা বিখ্যাত চেইন রেস্টুরেন্ট আছে। আমি নিজেও সেখানে গিয়েছি। সেখানে যারা সার্ভ করে তারা সবাই সংক্ষিপ্ত টাইট পরা তরুণী এবং তাদের এই ড্রেস কোড খুব স্ট্রংভাবে মানতে হয়। তারা মূলত মানুষের দুইটা আদিম চাহিদাকে ইন্টিগ্রেট করার চেষ্টা করেছেÑ খাদ্য ও যৌনতা। কিন্তু এখানে রুচির যে প্রশ্ন সেই প্রশ্ন উপেক্ষিত কিনা সেই বিতর্ক খোদ মার্কিন মুল্লুকে অনেকবার উঠেছে। একধরনের সমালোচক বলছে, এখানে নারী শরীর পণ্য বানিয়ে খাদ্য ব্যবসা করছে হুটার্স, আরেকপক্ষ বলছেÑ এটা আসলে মানুষের অবারিত স্বাধীনতার শিল্পীত রূপ। বিতর্ক যাই থাকুক, হুটার্স গার্লরা কিন্ত ভালো পে পায় তাই কলেজগামী মেয়েদের মাঝে অনেকেই পার্ট টাইম জব হিসাবে এটা বেছে নেয়। 

আমেরিকা অবারিত স্বাধীনতার দেশ। সেখানে যৌন স্বাধীনতা মানুষের খাদ্য গ্রহণ করার স্বাধীনতার সাথেই সমান্তরালভাবে এসেছে। এই অবাধ স্বাধীনতা আসলে নৈতিকভাবে কতোটুকু গ্রহণযোগ্য সেই প্রশ্নও উঠছে। তবে এই ক্ষেত্রে বুর্দো প্রাসঙ্গিক। কারণ স্বাধীনতার সাথে শিক্ষা যদি সংযুক্ত থাকে তাহলে যে রুচিবোধ তৈরি হয় সেটা শৈল্পিক, সেটা সোবার, সেটা সূক্ষ্ম,  সেটা উন্নত।। আরেকটু সহজভাবে বলি, হুটার্সে কারা যায় খেতে সেটা নিয়ে একটা গবেষণায় দেখা গেছে মূলত কম শিক্ষিত (হাইস্কুল এর পর আর পড়েনি), অভিবাসী শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের আনাগোনা বেশি। তাই তাদের গন্তব্য দেখে তাদের রুচিবোধের একটা ধারণা করা যায়। 

সমাজে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও যৌন আচরণ দেখে বুঝতে পারবেন সেই সমাজে মানুষের রুচিবোধ কেমন। এই রুচিবোধ তৈরিতে আপনি ধর্মীয় বিধিনিষেধ দিয়ে সাময়িক প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটা কাজ করে না। এর জন্য প্রয়োজন সেই শিক্ষা যেটা মানুষের ভেতরে সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলোকে জাগ্রত করবে একধরনের শৈল্পিক বোধ। এই বোধ তৈরি না হলে মানুষ আসলে আদিম দুই প্রবৃত্তিÑ খাদ্য ও যৌনতার জন্য সবকিছু করবে। তাই সমাজে যত অনাচার, অন্যায় দেখেন তার মূলে ঘুরেফিরে খাদ্য কিংবা যৌনতা। আপনি সারাদিন ধর্মীয় বাণী, যত আইন-কানুন বানিয়ে এই দুই আদিম প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন না, যতক্ষণ মানুষের মনন ও রুচিবোধ গঠন করতে না পারেন। শিক্ষা ব্যবস্থার আসলে কাজ মানুষের রুচিবোধ তৈরি করা। সেই কাজ ঠিকঠাক করতে না পারলে শিক্ষা আসলে সার্টিফিকেটের বোঝা ছাড়া কিছু না। ফেসবুক থেকে